বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
নোটিশ :
Wellcome to our website...

অমূল্য আগাছা ‘মুক্তঝুরি’

সুরেন্দু শেখর বিশ্বাস / ১০৬৫ বার
আপডেটের সময় : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

নামপর্যায়:

মুক্তঝুরি, মুক্তবর্ষী, মুক্তবর্চা, হরিতমঞ্জরী, বিলাইকান্দি, বিড়ালহাঁচি, বিল্লি লোটন, খুপ্পী, খোকালি, ভালিয়াকুপ্পামেনী ইত্যাদি। ইংরেজিতে Indian Acalyহবে/Indian copper leaf.

বৈজ্ঞানিক নাম:

Acalypha indica Lin.  Syn.Names – A. recemosa Wall., A. paniculata Miq., A. wallichiana The., A. filliformis Heyne.
Family  Euphorbiaceae

মুক্তঝুরি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশসহ পূর্বভারতের প্রায় সর্বত্র‌ই পাওয়া যায়। ১-৩ ফুট লম্বা ঝোপাকৃতি গাছ। পাতা ১-১.৫ ইঞ্চি, খানিকটা ডিম্বাকৃতি, গোড়ার দিক চ‌ওড়া। পাতার ধার করাতের মতো ধারকাটা। গাছের ওপরের দিকের পাতা কিঞ্চিত হলুদাভ। পূষ্পমঞ্জরি লম্বা ডাঁটির মতো, হরিৎ অর্থাৎ সবুজবর্ণ,  দুধারে অসংখ্য নাকছাবির মত ছোটো ছোটো সবুজ  ফুল। এই জন্য‌ই, মুক্তঝুরির আর এক নাম হরিতমঞ্জরী। গাছে, সারা বছর‌ই ফুল ফল বীজ থাকে।

ব্যবহার বিধি:

মুক্তঝুরি সমগ্ৰ গাছ প্রধানতঃ শ্লেষ্মা-নিস্বারক, বমনকারক, চর্মরোগনাশক কোষ্ঠকাঠিন্য নাশক ও ক্রিমিনাশক। আর একটি কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন, এটি প্রধানত শিশু ও বৃদ্ধদের অসুখে খুব‌ই উপযোগী।

বুকে কফ বসে গেলে মুক্তঝুরির শুকনো করে রাখা সমগ্ৰ সপূষ্প গাছচূর্ণ  ৫ গ্ৰাম, ৫০ মিলিঃ জলে ফুটিয়ে জল অর্দ্ধেক করে, ছেঁকে নিয়ে সামান্য মিছরি বা মধু মিশিয়ে অল্প গরম অবস্থায় সকাল-বিকাল খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে অর্দ্ধেকের‌ও কম মাত্রায় খাওয়াবেন।

পুরনো ঘি সিকি চা-চামচ ও মুক্তঝুরি পাতার রস ১-১.৫ চামচ একত্রে মিশিয়ে সামান্য গরম করে বুকে-পিঠে মালিশ করলেও দ্রুত কফ আলগা হয়ে উঠে যাবে।

যক্ষ্মারোগে ফুসফুস থেকে রক্তক্ষরণ (হিমোপটোসিস) হতে থাকলে, মুক্তঝুরিপাতার টাটকা রস ২ চা-চামচ, দুটি গোলমরিচের গুঁড়োসহ মিশিয়ে ৪-৫ ঘন্টা অন্তর কয়েকবার খাওয়ালে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।

বাচ্চাদের কথায় কথায় তড়কা  হলে  ১.৫-২ গ্ৰাম গাছচূর্ণ ৩০ মিলিঃ জলে ফুটিয়ে, জল অর্দ্ধেক হয়ে গেলে ছেঁকে নিয়ে আধখানা মটরদানার পরিমান সৈন্ধব লবন মিশিয়ে নিয়মিত সকালে খাওয়ালে কিছুদিনের মধ্যেই তড়কা দূর হয়ে যাবে। টাটকা গাছের রস‌ ৩০-৪০ ফোঁটা ৩-৪ চামচ ঈষদুষ্ণ জলে মিশিয়েও খাওয়াতে পারেন, এতে ফল আর‌ও দ্রুত পাওয়া যাবে।

শিশু ও বৃদ্ধদের কোষ্ঠকাঠিন্য এখন এক বড় সমস্যা, বিশেষ করে শিশুদের। মুক্তঝুরির কয়েকটি পাতা খুব মিহি করে বেটে, তাতে কয়েক ফোঁটা ঘি ভালো করে মিশিয়ে নিন। পানের বোঁটায় এই মিশ্রণটি লাগিয়ে সাবধানে শিশুর মলদ্বারে ঢোকালে কিছুক্ষণের মধ্যেই পায়খানা হয়ে যাবে। বৃদ্ধদের কোষ্ঠবদ্ধতায় সাপোজিটরির বদলে এই মিশ্রণটি আঙ্গুল দিয়ে মলদ্বারে ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মলবেগ আসবে ও পায়খানা হবে। পাতা-ফোটানো জল দিয়ে ডুস দিলেও দ্রুত মলনিঃসরণ হয়।

বাচ্চাদের ক্রিমিতে  মুক্তঝুরি পাতার ২০-২৫ ফোঁটা রস চামচে করে সামান্য গরম করে ২ চামচ জলে মিশিয়ে কয়েকদিন নিয়ম করে খাওয়ালেই ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।

সদ্যজাত শিশুর মাথায় একরকম চাপড়া চাপড়া চটাপড়া ঘা হয়। সামান্য কাঁচা হলুদের সাথে মুক্তঝুরি পাতা বেটে লাগিয়ে, পরের দিন চিরুনি দিয়ে সাবধানে চটাটা তুলে দিতে হয়। পরপর ৪-৫ দিন এটা করলেই শিশুর মাথার ঘা সেরে যাবে। তবে, বাচ্চার বুকে কফ-সর্দি থাকলে এটা লাগানো যাবে না।

মাথার খুসকির ক্ষেত্রেও কাঁচা হলুদের রস এক ভাগ ও মুক্তঝুরি পাতার রস দু-ভাগ একত্রে মিশিয়ে এক-দুদিন ছাড়া স্নানের আগে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ছুলি হলে মুক্তঝুরির টাটকা পাতার রস, নিয়মিত দিনে দুবার ছুলিতে লাগালে রোগটা অল্পদিনেই  সেরে যাবে।

বিছে মৌমাছি বোলতা ও ভীমরুলের দংশনে অসম্ভব জ্বালা যন্ত্রনা ও ফোলা কমাতে মুক্তঝুরির পাতা বেটে লাগালে খুব অল্প সময়েই সবকিছুই উপশম হবে। তবে, এসময় একটু বেশি করে জল খেতে হবে।

বাতের তীব্র ব্যথা-যন্ত্রনা কমাতে ২৫ গ্ৰাম টাটকা পাতা, অথবা ১০ গ্ৰাম শুকনো গাছ এক লিটার জলে ২৫-৩০ গ্ৰাম নুনসহ ফুটিয়ে জলটা ছেঁকে নিন। হাতস‌ওয়া গরম এই জলে ছোটো ন্যাকড়া ডুবিয়ে ভিজে সেঁক দিলে খুব তাড়াতাড়ি আরাম পাবেন।

ভেষজরূপে মুক্তঝুরির আর‌ও অনেকরকম লোকায়ত ব্যবহার থাকতে পারে। সুনির্দিষ্ট ও অভিজ্ঞতালব্ধ সেই জ্ঞান‌ও আপানাদের মন্তব্যের মাধ্যমে সংযুক্ত হোক এখানে। যুক্ত হোক স্থানভেদে  মুক্তঝুরির আর‌ও বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম। তাহলেই এই প্রতিবেদন সার্থক হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ