কবি নিবারণ পণ্ডিত অবিভক্ত বাংলার ভাটিয়ালি গান রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তি। ১৯৪১ সালে অবিভক্ত বাংলায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার সময় এবং ১৯৪৫ সালের কৃষক আন্দোলনের সময় তিনি গণসঙ্গীত রচনা করে প্রতিবাদ করেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১২। তাদের পরিবার মূলত কৃষিভিত্তিক হলেও পিতা ভগবানচন্দ্র শিক্ষকতা পেশার জন্য পন্ডিত উপাধি পেয়েছিলেন। নিবারণ পন্ডিত কিশোরগঞ্জের ‘রমানন্দ বিদ্যালয়ে’ সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১০ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হওয়ায় তার আর পড়াশোনা করা হয়নি। সংসারের হাল ধরতে একসময় তাঁকে বিড়ি বাধার কাজও করতে হয়।
গ্রামের যাত্রা দলে ও গায়কেরা তাকে তাদের দলে নিয়ে যেতেন। তিনি পালা গান গায়কদের হয়ে গোপনে গান লিখে দিতেন। প্রশ্নত্তর পর্বের গান অর্থাৎ কবিগানে ভীষণ দক্ষ ছিলেন। তাকে দলে নেওয়ার জন্য হিড়িক পড়ে যেত। কবির আত্মকথনে জানা যায় তিনি প্রেম ও ভক্তি রসের গান রচনায় আগ্রহী হলেও তৎকালীন রূঢ়বাস্তবতায় তার চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন হতে থাকে। সমাজের অন্যায় অবিচার অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার গান অন্তর থেকে এসময়ে নির্গত হত। দেশভাগের পরও তিনি এদেশ ছেড়ে চলে যাননি, ১৯৫০ এ কৃষকদেরকে নিয়ে গান লেখার অপরাধে আনসার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। কারাগারে সীমাহীন অত্যাচারের শিকার হন তিনি, এরপর তিনি ভারতে চলে যান। ১ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে কোচবিহারে নিজের বাড়িতে তিনি পরলোক গমন করেন।
কবি, সংগীত, রাজনৈতিক ও সমাজসেবক হিসেবে তিনি সারাজীবনই সক্রিয় ছিলেন। প্রয়াণ দিবসে বাংলা গানের এই নিবেদিত প্রাণ শিল্পীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিবেদন করছি।