রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ (১৮৩৩-১৯১৬)
বৈষ্ণব কবি রাধারমণের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সাথে তাঁর পরিচয় হয় শৈশব থেকেই। খ্যাতিমান লোককবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তার পিতা ‘রাধামাধব দত্ত’। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল।
রাধারমণ দত্ত ১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা ‘গুণময়ী দেবী’কে বিয়ে করেন। পিতার রচিত গ্রন্থগুলো সে সময় তার জন্য পিতার আদর্শ হয়ে অন্তরে স্থান করে নেয়।
কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজারেরও বেশি গান । লিখেছেন কয়েক শত ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারীকন্ঠে বিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও বৃহত্তর ময়মসিংহ অঞ্চলে একসময় এর প্রচলন খুব বেশি ছিল।
রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার, ও শিল্পী ছিলেন। জানা যায়, সাধক রাধারমণ দত্ত ও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে যোগাযোগ ছিল। একবার হাসন রাজা- রাধারমণের কুশল জানতে গানের চরণ বাঁধেন “রাধারমণ তুমি কেমন, হাছন রাজা দেখতে চায়”। উত্তরে রাধারমণ লিখেন- “কুশল তুমি আছো কেমন – জানতে চায় রাধারমণ”।
রাধারমণ একজন কৃষ্ণপ্রেমিক ছিলেন। রাধরূপে কৃষ্ণ-বিরহে তিনি লিখেছেন অসংখ গান……
“ভাইবে রাধারমণ বলে মনেতে ভাবিয়া
নিভ্যাছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়া।”
শাস্ত্রীয় পুস্তকাদীর চর্চা ও সাধু সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এসে তিনি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ইত্যদি নানা মত ও পথের সঙ্গে পিরিচিত হন।
স্ত্রী ও পুত্রদের পরলোক গমনে কবি রাধারমণ দত্ত সংসারজীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েন।
১২৯০ বঙ্গাব্দে ৫০ বছর বয়সে কবি চলে যান মৌলভীবাজারের ঢেউপাশা গ্রামে সাধক রঘুনাথ ভট্টাচার্যের কাছে। তিনি তার কাছে শিষ্যত্ব লাভ করেন। শুরু হয় কবির বৈরাগ্য জীবন ও সাধনা। গৃহত্যাগ করে জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের পাশে একটি আশ্রম তৈরি করেন। এখানেই চলে তাঁর সাধন-ভজনা।
বাংলার অন্যতম লোককবির প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।