আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন ও সমর্থন জোগাতে শুরু হয়েছে চেয়ারম্যান, সদস্য, মহিলা সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড় ঝাঁপ। বিশেষ করে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সব ভিড় করছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এখন মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পালা।
কিন্তু নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, কেন ভোট দিবেন সে হিসেব কি একবারও করেছেন ? স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ সরকার থেকে কি পাচ্ছে আর জনগণকে কি দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখেছেন কখনও ?
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সেবা আমাদের পাবার কথা, তা কি আমরা পাচ্ছি ? গত ৫ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে আপনার ইউনিয়নে কত টাকা বরাদ্দ এসেছে, আর আপনাদের ভোটে নির্বাচিত পরিষদের চেয়ারম্যান কতটাকা খরচ করেছেন তার একটা সম্ভাব্য হিসেব কি করেছেন ?
স্থানীয় সরকারের মজবুত ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকও বড় অংকের অনুদান প্রদান করে থাকে। আয়তন, লোকসংখ্যা ও অবস্থান বিবেচনায় বিশ্ব ব্যাংকের এলজিএসপি-৩ এর আওতায় প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে বছরে ২৫ লাখ থেকে ১কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। পরিষদের চেয়ারম্যান দলীয় বা স্বতন্ত্র যেই হোকনা কেন, এই টাকাগুলো কোন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সকল ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসে। এই বরাদ্দের প্রকল্প নির্বাচন ও বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদের শতভাগ স্বাধীনতা থাকে।
সাধারণ হিসেব করলে একজন চেয়ারম্যান শুধু বিশ্ব ব্যাংক থেকেই তার এলাকার উন্নয়নের জন্য ৫ বছরে দেড় থেকে পাঁচ কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। পরিমাণটা কিন্তু কম নয়। কাজ হচ্ছে কতটুকু ?
এরপর রয়েছে কর্মসৃজন প্রকল্প থেকে ৩৫-৪০ লাখ টাকা, এডিবি থেকে ১২-১৪ লাখ টাকা, কাবিটা ১০-১২ লাখ টাকা, কাবিখা ১০-১২ লাখ টাকা ইত্যাদি।
এছাড়াও বন্যার বাঁধ উন্নয়নে পিআইসি’র টাকা বাদেও আরো অসংখ্য বরাদ্দ আসে ইউনিয়ন পরিষদে। বিভিন্ন দুর্যোগ, মহামারীতে বিশেষ বরাদ্দ নামে তাৎক্ষণিক খরচের টাকা। যার পরিমাণও কম নয়। কিন্তু এই টাকাগুলো ব্যয় হয় কোথায় ? পুরোটাই প্রকল্পে নাকি কাগজপত্রে ?
একজন ইউপি চেয়ারম্যানের স্বদিচ্ছা আর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে ৫ বছরে সরকারি ও অন্যান্য বরাদ্দ থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়েই গ্রামের অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব খুব সহজেই। কিন্তু বাস্তবতা কি ?
অথচ, অনেক সময় চেয়ারম্যানের কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলে বরাদ্দ নেই, তাহলে সরকার প্রতি বছর ইউনিয়নে যে টাকাগুলো দেয় সেগুলো কোথায় যায় ?
দেশের উন্নয়নে সরকারের বড় বড় কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে না পারলেও, আপনার বাড়ির পাশে, আপনার গ্রাম নিয়ে গঠিত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সরকারের বরাদ্দ ও ব্যয় নিয়ে ভাবাটা অতিব জরুরি। যিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে এইসব বরাদ্দ ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন তাকেই আমাদের ভোট দেওয়া উচিৎ।