করিমগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী শাহজালাল হত্যায় তিনজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করছে ফেনী মডেল থানা পুলিশ।
১৬ জুলাই, শুক্রবার দায়ের করা হত্যা মামলায় ফেনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালামের দুই সহযোগীসহ তাকে প্রধান আসামী করে এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চত করেন ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে অনতিবিলম্বে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আমরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিদর্শন করি। ঘটনার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের বর্ণনা অনুযায়ী রাতভর অভিযান চালিয়ে পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় ঘটনাস্থলের পাশের একটি পুকুর থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজালালের মৃতদেহ উদ্ধার করি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে লাশের সরতহাল সম্পন্ন করে নিহতের স্বজন গিয়াস উদ্দিন মেম্বারসহ অন্যান্যদের সঙ্গে করে লাশ নিজ এলাকা করিমগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এ ঘটনায় আমার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যে সাগর নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর বাকি আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ফেনী জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী পিপিএম বিপিএম বার জানান, ঘটনা জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশী অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর আবুল কালামের বাসা থেকে নিহতের রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হত্যায় জড়িত সাগর নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ফেনী জেলা পুলিশ সুপার, ফেনী মডেল থানা অফিসার ইন-চার্জ, সেখানকার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী, ফেনীর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও নিহতের সঙ্গীয় অপরাপর ব্যবসায়ীদের বর্ণনা অনুযায়ী যেভাবে জালাল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়-
নিহত শাহজালাল সাজু (২৬) কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের সাগুলী গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে। মামলার প্রধান আসামী আবুল কালাম ফেনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।
১৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে সুলতানপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন আহসান মিয়ার বাড়ির সামনে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানি ঈদ উপলক্ষে গরু বিক্রি করার জন্য ট্রাকে করে কিশোরগঞ্জ থেকে শাহজালালসহ ১০ ব্যবসায়ী ফেনীতে যান। তাদের দুটি ট্রাকেতে ২০টি গরু ছিল বলে ব্যবসায়ীরা জানান, গরুবোঝাই ট্রাক দুটি শহরের সুলতানপুর এলাকার সাহেব বাড়িতে ঢোকার সময় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আবুল কালাম তাদের পিছু নেয়। তখন আনুমানিক রাত ২টা বাজে। গরু ব্যবসায়ীরা গরু বোঝাই দুটি ট্রাক নিহতের আত্মীয় সূত্রে বোন জামাইয়ের বাড়ির সামনে রাখে। এ সময় আবুল কালাম স্ব-দলবলে গরুবোঝাই ট্রাকটি ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে শাহজালালসহ তার কয়েকজন সহযোগী ব্যবসায়ীর উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। ছিনতাইকারী দল ও গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক ফাঁকে কাউন্সিলর আবুল কালাম পিস্তল হাতে ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে ২টি গুলি ছুঁড়লে একটি গুলি এসে লাগে জালালের শরীরে। এসময় অন্যান্য ব্যবসায়ীরা প্রাণ ভয়ে কিছুটা পিছু হটলে ছিনতাইকারীরা মটরসাইকেলে করে জালালের লাশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত চলে যায়। পরে অন্যান্য গরু ব্যবসায়ীরা ও নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থলে জালালকে দেখতে না পেয়ে অনেক জায়গায় খুঁজাখুঁজি করে। অনেকক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর তাকে দেখতে না পেয়ে ফেনী মডেল থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানানো তারা।
এদিকে করিমগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ মুমিনুল ইসলাম ঘটনার পর পরই নিহত জালালের বাড়িতে যান। পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান। তিনি এ হত্যাকান্ডের মূল্য রহস্য উদঘাটন ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে সর্বাত্বক চেষ্টার আশ্বাস প্রদান করেন।