মহান মুক্তিযুদ্ধে করিমগঞ্জের শহীদ শওকতের মা ১১ আগস্ট (বুধবার) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার বারঘড়িয়া ইউনিয়নের ফতোরগোপ আতিব বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
শহীদ জননী সন্ধ্যার মা (৯০) বার্ধক্যজনিত কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন।
মৃত্যকালে তিনি চার ছেলে, ছয় মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সন্ধ্যার মা ১৯৭১ সনের ১২ নভেম্বর করিমগঞ্জ গণহত্যা দিবসে শহীদ শওকত এর মা ও শহীদ খুর্শিদ উদ্দিন এর একমাত্র বোন এবং সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী হাবিবুর রহমান বিপ্লব এর দাদী।
শহীদ জননীর মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধ গণগবেষণা কেন্দ্র এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকবাল গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ও মরহুমার আত্মার শান্তি কামনা করেন।
অপর এক শোক বার্তায় যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির সভাপতি সাংবাদিক রেজাউল হাবিব রেজা উল্লেখ করেন, এমন মহীয়সী মায়েদের জন্যেই নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছিল।
পুত্রশোকে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারালেও মনোবল হারাননি কখনো। যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে পুত্রের জীবনদানকে তিনি গর্বের সাথে প্রকাশ করতেন।
নিজহাতে খাবার তৈরি করে পুত্র শওকতের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের কঠিন দিনগুলোতে পৌঁছাতেন।
তার ভগ্নিপতি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রগতিশীল রাজনীতিক প্রয়াত আসত উল্লাহ মুন্সীর উৎসাহ উদ্দীপনায় ও মাতৃহৃদয়ের তাড়নায় একাজ গুলো তিনি করতেন। প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খুর্শেদ উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের নিয়ে রাতের অন্ধকারে যখন বৈঠকে বসতেন কুপি বাতির টিমটিম আলোতে মুড়ি, কৈ-চিড়া দিয়ে পাঠাতেন।
শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উদযাপনের দিনগুলোতে শিক্ষার্থী নাতি-নাতনীদের কাছে যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা তুলে ধরেন। পুত্রশোকে বিহ্বল হয়ে কখনো বিলাপ করতেন।
শহীদ জননীর জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে যেন কান্নার পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
আগামীকাল ১২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকাল নয়টায় স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।