” কি যে ভালো লাগছে, তা বলে শেষ করা যাবেনা। বহুদিন পর কলেজে আসা, স্যার-ম্যাডামদের সাথে কথা বলতে পারা, বন্ধুদের নিয়ে একসাথে হওয়া- সত্যিই দারুন লাগছে! অসাধারণ একটা দিন পার করছি আমরা। “
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় নিজ শিক্ষাঙ্গনে এসে এমনই অনুভূতির কথা জানিয়েছে করিমগঞ্জ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মানবিক শাখার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মালা আক্তার।
করোনা ভাইরাসের সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীর বিধ্বংসী আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেতে বিগত ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে শুরু হয় কঠোর লকডাউন। আর লকডাউনের বিধি নিষেধ অনুযায়ী জনসমাগম এড়াতে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
করোনা মহামারির প্রাদূর্ভাব কমে যাওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ১৯ দফা নির্দেশনা পালনের শর্তে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সারাদেশের ন্যায় করিমগঞ্জেও খুলেছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের আগমন উপলক্ষে দীর্ঘদিন পরে নতুন রূপে, বাহারি সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর আঙ্গিনা। একটা নীরব উৎসবের আমেজ বইছে শিক্ষক শিক্ষার্থী সকলের মনে। আর এসবই হয়েছে সরকারের ১৯ দফা নির্দেশনা মেনেই।
উপজেলার পিচঢালা পথ কিংবা গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে আলোর মিছিলগুলো ছুটে চলছে নিজ নিজ বিদ্যাপিঠে। নির্দিষ্ট সময়েরর মধ্যে পৌছানো অধিকাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে শ্রেণি কক্ষ হয়ে উঠছে উৎসবমূখর ও প্রাণবন্ত। দিনশেষে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য করা গেছে।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫টি, ১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ১টি সরকারি কলেজসহ ৪টি এমপিও ভুক্ত কলেজ রয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় ১টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, ১৯টি এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল, ৯টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলসহ ১৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। করিমগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত ১৯ দফা নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা জানতে উপজেলার পৌর এলাকার করিমগঞ্জ সরকারি মহাবিদ্যালয়, করিমগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, করিমগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাইল্ড কেয়ার কিন্ডার গার্টেন, করিমগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল আশুতিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করিমগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি আদর্শ শিশু নিকেতন, গুজাদিয়ার প্যারাডাইস জুনিয়র হাই স্কুলে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়।
বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সরকার ঘোষিত ১৯ দফা নির্দেশনা ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যহত আছে। বিদ্যালয়গুলোতে হ্যান্ডস্যানিটািইজার, সাবান সহ অতিরিক্ত মাস্ক সংরক্ষণ করা হয়েছে। সব বিদ্যালয়েই থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ও টাঙানো হয়েছে সচেতনামতা মূলক ব্যানার। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক।
এবিষয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সরকার ঘোষিত ১৯ দফা নির্দেশনা শতভাগ অনুসরণ করার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকল বিদ্যালয়কেই পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই আমরা নিয়মিত সরেজমিনে পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি।
এছাড়াও বিদ্যালয়গুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক,শিক্ষক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
প্যারাডাইস জুনিয়র হাইস্কুলের পরিচালক রঞ্জন কুমার সরকার বলেন, সরকার ঘোষিত চলমান নির্দেশনা শতভাগ অনুসরণ করে আমার প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেছি।
করিমগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, সরকার ঘোষিত ১৯ দফা নির্দেশনা নিশ্চিত করতে আমাদের বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রী সহ প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক হওয়ায় আমাদেরকে বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।
তিনি এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।