বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
নোটিশ :
Wellcome to our website...

কিশোরগঞ্জের হাওরে দিল্লী নামের কিংবদন্তি : ভাটি অঞ্চলের লোককথা

জহিরুল আলম জাহাঙ্গীর / ১০০৯ বার
আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার দক্ষিণ পুর্ব কোণে সুরমা নদীর তীরে অবস্হিত হিজল বন পরিবেষ্টিত একটি স্হানের নাম দিল্লী। এখানে এই স্হানটির দিল্লী নাম করণের পেছনে যে কিংবদন্তিটি চালু আছে তা বলার আগে একটা পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক তথ্য উপস্হাপন করছি।

হিন্দু ধর্মমতে সত্যযুগের হরি,ত্রেতাযুগে আসলেন রাম অবতারের রুপ নিয়ে। তারপর তিনিই দ্বাপর যুগে এলেন কৃষ্ণের রুপ নিয়ে। সর্বশেষে কলিযুগে রাধাকৃষ্ণের যুগল অবতার হয়ে এলেন গৌরাঙ্গ। সিলেট জেলার দক্ষিণ গাঁও নামক গ্রামের জগন্নাথ মিশ্র নামের এক ব্যক্তি নবদ্বীপের নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শচী দেবীর সঙ্গে পরিণয় সুত্রে আবদ্ধ হন। সেই জগন্নাথ মিশ্রের পুত্র গৌরাঙ্গই কলিযুগের শেষ অবতার। তিনি ১৪৮৬ খৃষ্টাব্দে আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের শাসনামলে চৈতন্যদেব বর্ণ বৈষম্য নাম নিয়ে বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার শুরু করেন। তিনি বাঙালি হিন্দুদের কাছে নিমাই সন্যাসী নামেও পরিচিত, কারণ লক্ষ্মী ও বিষ্ণুপ্রিয়া নামে দুই রমনীকে বিয়ে করে মাত্র তেইশ বছর বয়সেই তিনি কাটোয়া নিবাসী জনৈক ব্রক্ষ্মচারীর নিকট সন্যাসব্রত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তুু কিছুদিন পরই তিনি বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার করতে থাকেন এবং বর্ধমান জেলার একচক্রা গ্রামের হাড়াই পন্ডিতের ছেলে নিত্যানন্দকে সঙ্গী করে ভারতের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমন করে ১৫৩৩ খ্রীষ্টাব্দে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে নীলাচলের সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন, মতান্তরে অলৌকিক ভাবে অদৃশ্য হয়ে যান।

তারপর শ্রীচৈতন্যের শ্যালক মাধবাচর্য্য বৈষ্ণব ধর্মের বাণী নিয়ে বর্তমান কিশোরগন্জ জেলায় এসেছিলেন। কিন্তুু অনুকুল সাড়া না পেয়ে তিনি মধুপুরের নিবিড় জঙ্গলে গুপ্ত বৃন্দাবন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অনতিকাল পরে নারায়ন গোসাই নামক এক ব্যক্তি পুর্ব উল্লেখিত ইটনা উপজিলার দক্ষিণ -পুর্ব প্রান্তে সুরমা নদীর তীরে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে দিল্লীর মোগল সম্রাট নুরুদ্দীন মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর গাজীর সুবেদার শেখ আলাউদ্দিন ইসলাম খান চিশতী সিলেট,কাছাড় ও কামরুপ সহ বৃহত্তর বাংলাদেশ মোগল শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেন।
এই সময়ে সফররত দু ‘জন মোগল রাজ কর্মচারী এই স্হানে এসে নারায়ন গোঁসাইকে দেখতে পান এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর একটি আশরাফী দান করেন। সংসার ত্যাগী বৈষ্ণব রাজ কর্মচারীর এই দান বারকয়েক কপালে ঠেকিয়ে নদী গর্ভে নিক্ষেপ করেন। কিন্তুু বৈষ্ণবের এই আচরণে রাজকর্মচারী দ্বয় অপমান বোধ করেন এবং তাদের দান ফেরত চেয়ে বসেন। তখন সাধু নারায়ন গোঁসাই নদীর দিকে ইঙ্গিত করতেই একটি মাছ সেই আশরাফিটি মুখে নিয়ে ভেসে উঠে এবং তীরের দিকে ছুঁড়ে মারে।

সাধুর এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মোঘল কর্মচারীদ্বয় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অতপর সাধুর ইচ্ছা অনুযায়ী তারা দিল্লীর সম্রাট জাহাঙ্গীর বাদশার অনুমিত ক্রমে প্রায় ৩ শত একর নিস্কর ভুমি প্রদান করেন। স্হানটি একটি হাওড়ের মধ্যখানে অবস্হিত এবং চতুর্দিক থেকে জলরাশি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। সমগ্র জায়গাটি অসংখ্য হিজল গাছে পুর্ণ। এর মাঝখানে একটা উঁচু জায়গায় সুদৃশ্য কয়েকটি দালান। দুর থেকে এটিকে একটি বন ভুমি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। উল্লেখ্য যে, এই স্হানটি এককালে ইটনা উপজেলার অন্তর্গত থাকলেও বর্তমানে এটি মিঠামইন উপজেলার অন্তর্গত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ