গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার পর পরই ১২০ পৃষ্ঠার সবটাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে ফেললাম। প্রথম লেখাটি মরহুম নেতার একমাত্র সন্তান (মেয়ে) শামসুন্নাহার পুতুলের ’আমার বাবা জমিয়ত আলী’ আর শেষ লেখাটি শেষ হয়েছে জামাতা আবু সিদ্দীক সাহেবের জীবনী দিয়ে।
’জননেতা জমিয়ত আলী ‘ স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ড. হালিম দাদ খান নিঃসন্দেহে এহজন ভাল সম্পাদক ও সাহিত্যিক। তার সম্পাদনা গুণেই বইটি সুপাঠ্য হয়ে উঠেছে।
জমিয়ত আলীর কন্যা পুতুল তার লেখায় কমরেডের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকার বর্ণনায় তুলে ধরেছেন। লেখকদের মধ্যে বেশিরভাগই করিমগঞ্জ এলাকার মানুষ, যাদের মধ্যে সবাই এই জননেতাকে সম্যক দেখেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন অথবা তার রাজনৈতিক শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, লেখাগুলোর মধ্যে কমরেড জমিয়ত আলীর রাজনৈতিক আদর্শের তুলনায় তাঁর সামাজিক কর্মগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে, অবশ্য সেগুলো অনিবার্য ছিল। ৪৩ এর মন্বন্তর ও ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ উভয়টাতেই জমিয়ত আলীর তৎপরতা ছিল ঐতিহাসিক। তবে, বেশিরভাগ কথা হয়েছে ৪৩ এ তাঁর ভূমিকা নিয়ে। আর কমরেডের প্রতিটি (সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসহ) বিষয় ধারাবহিক তুলে ধরেছেন গ্রন্থ সম্পাদক ড. হালিম দাদ খান নিজেই।
বইটিতে একটা জায়গায় একটু ঘাটতি রয়েছে বটে, আর সেটি হচ্ছে কোন একটি লেখাতেও কমরেড জমিয়ত আলীর রাশিয়া সফরের আদ্যপান্ত বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তাঁর রাশিয়া ভ্রমণের উপর একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা থাকতে পারতো। আমার দৃষ্টিতে, বইটি পড়ে কোন কোন (করিমগঞ্জী) লেখককে বুঝে দেখেলাম যে তারা জমিয়ত আলীর একান্ত শিষ্য ও অনুরাগী হওয়া সত্ত্বেও তাদের নিজেদের জীবনে কমরেডের আদর্শকে সামান্যও ধরে রাখতে পারেনি। জমিয়ত আলীর মতো একজন বামরাজনীতির একনিষ্ঠ সাধক, যিনি ১৫ আগষ্টের হত্যার প্রতিবাদ আন্দোলন করে গ্রেফতার হয়েছিলেন, অথচ পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যদের কেও কেও (কবির উদ্দিন আহম্মদ সহ) সামরিক খুনি জান্তার পদাঙ্ক ধরে বিপরীত অবস্থানে চলে গেলেন। জীবনের বিভিন্ন সময়ে শ্রদ্ধেয় জমিয়ত আলীর কাছে থাকতে পারা এই আমার সাথেই বিষয়টি নিয়ে জমিয়ত আলী সাহেব একবার দুঃখও প্রকাশ করেছিলেন। কমরেডের অন্য একজন শিষ্যকে দেখেছিলাম বামরাজনীতির চমক দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত এরশাদের দলে হাত মিলিয়ে ছিলেন। নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ, অভিমান, রাগ-দুঃখ যাই বলুননা কেন বিষয়টা এই কারণে বললাম যে, একজন প্রকৃত শিষ্য কখনও তার গুরুর আদর্শ ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারেননা।
পরিশেষে, জমিয়ত আলীর নাতনি নায্মুন নাহার মলী এর তৎপরতায় আমরা জমিয়ত আলীকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি, সেজন্য মলীকে হাজারো ধন্যবাদ। আমার কাছে মলীর স্মৃতিচারণ মূলক লেখায় ’হিদল ভর্তা’,’ছড়তা’,’ছাট্টোয়ার দেউরি’,’বৌলা-খড়ম’ ইত্যাদি শব্দগুলো বেশ উপভোগ্য হয়েছে। আগামী প্রজন্মের কাছে কমরেডের জীবনাদর্শ ও ইতিহাসকে যুগ যুগ জিইয়ে রাখতে ’জননেতা জমিয়ত আলী’ স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক, প্রকাশক ও লেখকগণ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।