নেত্রকোনার এ পাহাড়ের খাঁজে এখনো অজানা ছোট্ট একটি গ্রাম লেঙ্গুরা। শান্ত সুনিবিড় জীবন-যাপন আর জলে জঙ্গলের সুনিবিড় পরশে বেড়ে ওঠা একটি জনপদ। পটে আঁকা লেঙ্গুরার বুক চিরে চলে গেছে চপলা সুন্দরীর মতো এক নদী গণেশ্বরী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেংমাং পাহাড় থেকে বয়ে আসা এই নদীর বুকে চিকচিক করছে সিলিকা বালি। এই নদী ধরেই পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ছোট্ট ঝরনা ধারা। এর একপাশে ভারত সীমান্ত ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশছোঁয়া সব পাহাড় আর অন্য পাশে ছোট বড় টিলা।
টিলায় আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপন। বাংলাদেশের সীমানায় থাকা এই টিলাগুলোর রয়েছে বিভিন্ন নামও। মমিনের টিলা, চেয়ারম্যানের টিলা, গাজীর টিলা ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় টিলাটি হলো মমিনের টিলা। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই টিলা। গারো, হাজং, হদি, কোচ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে এখানে।
টিলার চূড়ায় যাবার জন্য জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত পাকা সিঁড়িও রয়েছে। তবে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়রা বেছে নিতে পারেন গাছের লতা পাতা ধরে টিলার বুক চিরে উঠে যাওয়া পাথর মাটির পথটি! টিলার উপরে বিশ্রামের জন্য রয়েছে বেঞ্চ এবং ছাতা। এই টিলায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় মেঘালয় পাহাড় আর মেঘের মিতালী। অপরূপ এক দৃশ্য এটি। নিচে তাকালে দেখতে পাবেন চপলা সুন্দরী গণেশ্বরীর বিচিত্র রূপ সুধা।
কলমাকান্দা সদর থেকে নাজিরপুরের পথে ওঠা মাত্রই দূর থেকে দৃষ্টি কেড়ে নেয় মেঘালয়ের পাহাড় রাজ্য। মনে হয়, মেঘ যেন মিতালী করছে আকাশ-মাটির সঙ্গে। এই পথ ধরে এগিয়ে যান। কিছুদূর এগিয়ে গেলেই পাবেন নাজিরপুর মোড়। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ গড়ে তোলা হয়েছে। একাত্তরে পাকবাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল নাজিরপুরের এই স্থানে। শহীদ হয়েছিলেন সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাজিরপুর মোড় হয়ে গণেশ্বরী নদীর পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে লেঙ্গুরা বাজার। দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তি দূর করতে বাজারের বিচিত্র সাংমার দোকানের এক কাপ বেল-চায়ে চুমুক দেয়া যেতে পারে। কাঁচা বেলের শুঁটকি দিয়ে এই বিশেষ চা তৈরি করেন তিনি।
আকর্ষণীয় স্থানটি নেত্রকোনা জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। বাসে বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে প্রথমে যেতে হবে কলমাকান্দা। সেখান থেকে আবার মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটো রিকশাতে নাজিরপুর হয়ে সোজা লেঙ্গুড়া।