গরমের সময়। তীব্র গরম পড়ার কথা। এ সময়ে গরমে মরুভূমির বালি তেতে ওঠে। অদ্ভুতভাবে আজ বাতাসে শীতল ভাব। আকাশে মেঘ আছে। তাতে মরুভূমির বালি দেখাচ্ছে বাদামী।
আবু বকর এসেছেন মুহাম্মদের কাছে। বিশেষ কোনো দরকার নেই। আজ ঈদ। মদিনায় হিজরতের পর প্রথম ঈদ। সকালে দুজনে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে মুহাম্মদ গিয়েছিলেন প্রতিবেশিদের সঙ্গে দেখা করতে। মুহাম্মদকে বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিয়ে আবু বকর নিজ বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন মুহাম্মদ ঘরের বারান্দায় দড়ির তাকিয়াতে শুয়ে আছেন। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন।
বেলা বেড়ে গেছে। মুহাম্মদ বিশ্রাম নিচ্ছেন ভেবে আবু বকর কোনো শব্দ করলেন না। চুপচাপ মুহাম্মদের পাশে বসে থাকলেন।
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা দফ বাজাচ্ছে। ঈদের আনন্দ উথলে পড়েছে তাদের চোখমুখে। তারা দফ বাজিয়ে গান গাইছে। আনন্দ করছে। তাতে আওয়াজ হচ্ছে ভীষণ।
আবু বকর ডানহাতের তর্জনি নিজ ঠোঁটে ছোঁয়ালেন। ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় তাদের থামতে বললেন। তারা ইশারার অর্থ বুঝতে পেরেছে। তখুনি দফ বাজানো বন্ধ করে শান্ত হয়ে গেল।
দফ বাজানোর আওয়াজ নেই। ছোটো ছেলেমেয়ের আনন্দের হুল্লোড় নেই। মুহাম্মদ বিস্মিত হলেন। তিনি আলতোভাবে চোখ মেললেন। দেখলেন পাশে আবু বকর বসে আছেন। ছেলেমেয়েরা দফ বাজানো বন্ধ করে ধীর পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
মুহাম্মদের নমনীয় ভরাট গলা। তিনি নরম গলায় বললেন, “আজ ঈদের দিন। ওরা আনন্দ করছে করুক। ওদের নিষেধ কোরো না।”
আবু বকর উচ্ছ্বসিত গলায় ছেলেমেয়েদের ডেকে বললেন, “বাজাও দফ, গান গাও।”
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা দফ বাজিয়ে গান গেয়ে আবার ঈদের আনন্দ হুল্লোড়ে মেতে উঠল।
মুহাম্মদ চোখ মেলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন ছেলেমেয়েদের দিকে। এমন সুন্দর দৃশ্য তিনি বহুদিন দেখেননি।
অতিমারি থেকে মুক্ত হই আমরা। ভালো থাকি সকলে, আনন্দে থাকি। ঈদ মুবারক।
’মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বইটির প্রচ্ছদ অলংকরণ করেছেন রফিক উল্যাহ