ভিকারুন্নেসার ওই শিক্ষিকার ফোনালাপটি মন দিয়ে শুনলাম। আমার কেন জানি সব কিছু শোনার মত অনেক ধৈর্য আছে। রুচি বা অস্বস্তির সাথে সম্পর্কিত সেলগুলি চালু হতে সময় নেয়।
অবশ্যই, আমি মনে করি উনার কথোপকথন একজন শিক্ষকের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার যে স্ট্যান্ডার্ড সমাজে চালু রয়েছে তার সাথে বেমানান। সেটা পাবলিক কনভারসেশনই হোক অথবা হোক কোনও ব্যাক্তিগত পর্যায়ের কথাবার্তা।
কিন্তু এই কথোপকথনটির ভিন্ন দিকটিও দেখতে হবে। গত এক যুগ ধরে সরকারী অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক একটি করে ‘টাউট’ অথবা ‘বাটপার’ শ্রেনী গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকার কারনে এরা অনেক শক্তিশালী, এমন কি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাদের এই শক্তিমত্তা প্রতিষ্ঠানটির নীতি-নির্ধারকদের থেকেও বেশী।
এরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে এবং ভিতরকার ‘মধু’গুলি নিয়ে ভাগ-বাটয়ারায় মত্ত হয়ে থাকে। এদের সাথে প্রতিষ্ঠানটির কতিপয় কর্মচারীদের যোগসাজশ তো আছেই। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্ণধারকেই পারিপার্শ্বিকতার চাপে তাদেরকে সমীহ করে চলতে হয়। তা না হলে বদলী অথবা অপদস্থ করার নানান কূটকৌশল। তার সাথে নিকট অতীতে যুক্ত হয়েছে অনলাইন মিডিয়া (পড়ুন মাফিয়া) আর ভুঁইফোড় সাংবাদিকের চোখ রাঙ্গানো। ভিকারুন্নেসা স্কুলের অভিভাবকদের এই সংগঠনটিকে আমার এই দালাল আর টাউট শ্রেণীটির প্রতিনিধিত্বকারী বলেই মনে হয়েছে।
উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কর্মরত অনেক অফিসারকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি যাদের সততা, দক্ষতা আর উদ্যমের কোনও অভাব না থাকার পরও এই দালাল আর টাউট শ্রেনীর কারনে অনেক কিছু করতে ভয় পায়। কারন সে জানে, তাকে বিপদে পড়তে হবে। ইদানিং তার সাথে যুক্ত হয়েছে কোনও একটা ঘটনার অর্ধেক খবরেই মিডিয়া-ট্রায়ালে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। এই সমস্ত পারিপার্শ্বিকতায় উদ্যমী এবং দক্ষ অফিসারটির মনের ভিতরে পুষে রাখা ভাল কাজের ইচ্ছেগুলি মরে যায়। এই শ্রেণীটিকে হ্যান্ডেল করতে করতেই তার সময়টা চলে যায়।
সাদা চোখে দেখলে এই শিক্ষিকা অবশ্যই দোষী। কিন্তু, অন্যায়ের কাছে মাথানত না করার কারনে তাকে প্রভোক করে কথা গুলি জনসমক্ষে নিয়ে আসার সম্ভাবনাটাকেও খতিয়ে দেখতে হবে। এই টাউট শ্রেনীটি ভয়ংকর। রেগে গেলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, এর অনেক উদাহারন আমার আপনার চারপাশে রয়েছে। একজন শিক্ষকও দিন শেষে রক্ত-মাংসের একজন মানুষ।
সুতরাং, শুধুমাত্র গালাগালি আর অশ্লীল শব্দচয়নের দিকটুকু দিয়ে পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে একটি জাজমেন্টে চলে যাওয়া আমাদের নাগরিক সমাজের জন্য হবে ‘অন্ধের হাতী দর্শন’।
সবাই ভাল থাকুন।