বিজেপি’র মুখপাত্র নিশ্চয়ই জানেন ধর্মের সাথে দেশের যোগ , দেশের চেয়ে যা অনেক বড়, তাই দেশের ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায়।
নুপুর শর্মা’র জানা ভারতবর্ষের ধর্মতত্ত্বে একটি বিশেষ পথ দিয়ে খোদার দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ’র বিশেষের শেষ নেই, পানি তাঁর বিশেষ, মাটি তাঁর বিশেষ, বাতাস তাঁর বিশেষ, আগুন তাঁর বিশেষ, প্রাণ -আকাশ তাঁর বিশেষ, বুদ্ধি -প্রেম সবই তাঁর বিশেষ।
যিনি নিরাকার তাঁর আকারের শেষ নেই।
ধর্মের স্থুল – সুক্ষ, অন্তর-বাহির, শরীর – আত্না এ দুটোকেই ভারতবর্ষ পূর্ণ ভাবে স্বীকার করে। যিনি রূপেও সত্য অরূপেও সত্য, স্থুলেও সত্য সূক্ষ্মেও সত্য, ধ্যানেও সত্য প্রত্যক্ষেও সত্য তা সর্বোতভাবে দেহে মনে কর্মে উপলব্ধি করবার আশ্চর্য বিচিত্র প্রকান্ড চেষ্টা রয়েছে। ভারতবর্ষের নানা প্রকাশে ও বিচিত্র চেষ্টার মধ্যে একটি গভীর ও বৃহৎ ঐক্য আছে, এটা আনন্দের, সুরে তালে ছন্দের ঐক্যতানে, বেদনা-সমবেদনার, অনুভব ও আবেগের, উপলব্ধি প্রকাশে ও শিল্পকর্মের বিকাশে।
ধর্মসম্বন্ধে নুপুর শর্মা যে সমস্ত তর্ক করলেন তা ধর্মের দিক থেকে নয় – দলের দিক থেকে। ধর্মের দিকে যখন সত্যতার টান না থাকে তখন এমন ঘটে, তখন ধর্মটাও বংশ, মান, টাকাকড়ির মতোই অহংঙ্কার করবার সামগ্রী হয়ে দাঁড়ায় –
যেখানে বিশ্বাস পৌঁছে না
সেখানে ভক্তির ভান করে বলে
বার-বার নিজের কাছেই লজ্জ্বিত হতে হয় –
মনের ভিতর ফাঁক বুঝাতে অনেক মশলা খরচ করতে হয় যেমন নূপুর শর্মা নবীজীকে নিয়ে করলেন।
ভক্তি সহজ হলে এমন তর্কের দরকার পড়ে না। সত্যের সাথে মানুষের যথার্থ সম্বন্ধ ভক্তির, তাতে মানুষকে বিনয়ী করে। তা না হয়ে নূপুর শর্মা উদ্ধত ও অহংঙ্কার করে নিজের ক্ষুদ্রতাকে সুস্পষ্ট প্রকাশ করেছেন। তার ব্রক্ষত্ব বলে একটা উগ্র আত্নপ্রকাশ সমস্ত কথায় অশোভন মনে হয়েছে। বিজিপি’র কাছে আদর বেড়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সহ প্রতিবেশী দেশে ভারতবর্ষের প্রয়োজনীয়তা ও প্রভাবের মাপটা স্পষ্ট বুঝা গেছে । কিন্তু এই ব্রক্ষত্বগিরি স্বভাবিক মানবতাকে জখম করে। তারা ভাবে ধর্ম সাধনার ফলে নূপুর শর্মার দৃষ্টিশক্তি এমন আশ্চর্য স্বচ্ছ হয়েছে সকল লোকের ভালমন্দ সত্যাসত্য অনায়াসে বুঝতে পারেন। সকলকে সর্বদাই বিচারে তিনি উদ্যত।
বিষয়ী লোকও পরনিন্দা পরচর্চা করে তবে নূপুর শর্মা’র মতন ধার্মিকতার ভাষায় সে নিন্দা আধ্যাত্নিক অহংঙ্কার মিশ্রিত হয়ে দুনিয়া জুড়ে সুতীব্র উপদ্রব্যের সৃষ্টি করে তা গত জু্ম্মায় দেখা গেলো। এই হিন্দুয়ানীর মধ্যে একটা প্রতিকূলতার ভাব আছে, এটা এতো প্রশস্ত নয়, নিজের ভক্তি বিশ্বাসের জন্যে পর্যাপ্ত নয়। এ অন্যকে আঘাত করবার জন্যে সর্বদাই উগ্রভাবে প্রস্তুত।
হিন্দুর ক্ষয় হয়নি তা নয়
সমাজের ক্ষয় বুঝতে সময় লাগে, ইতিমধ্যে হিন্দুসমাজের জানালা খোলা ছিল। তখন এ দেশের অনার্য জাতি হিন্দু সমাজের মধ্যে প্রবেশ করে একটা গৌরববোধ করছে। এ দিকে মুসলমান আমলে দেশের প্রায় সর্বত্রই সমাজ থেকে বেরুনোর বাঁধা ছিলো না , তারপর ইংরেজ অধিকারে সকলকেই আইনের দ্বারা রক্ষা করেছে। সে রকম কৃত্রিম সমাজের দরজা বন্ধ এখন আর সম্ভব নয়। সেজন্য দেশবিভাগের বড় কারণ ছিলো মুসলমান বেড়ে যাওয়া। যার রেশ বিজেপি সরকারের এনআরসি আর ক্যাবের সংযোগ রয়েছে।
কেউ যদি রাজনীতি ধর্ম জ্ঞান করে
ভারতবর্ষকে আঘাত করে তখন কি হবে –
তখন হিন্দু জাতি বলে এতবড় বিরাট সত্তার পক্ষে বেদনাকর আঘাত, খুব চিন্তা করে দেখতে হবে ভুলগুলো, অন্ধত্ব। সব দিক সব রকম চিন্তা করছে কিনা – জাপান অষ্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাট বন্ধনে উৎপাত করতে প্রবৃত্ত হচ্ছে কিনা – চীন ঠেকাতে।
ইঁদুর যখন জাহাজের খোল কাটে তার সুবিধার জন্য মাথায় রাখেন না এতবড়ো আশ্রয়ে ছিদ্র করলে সকলের জন্য কত বড় ক্ষতি। শুধু দলের কথা ভাববে নাকি সমস্ত মানুষের কথা ভাবছে। মানুষ বললে কতটা বুঝায়, কেবল নিজের দলের শাসন সকলের উপর খাটাতে, কিন্তু কেবল দলের খাতায় নাম লেখাতে সকলে জন্মে না।
ভারতবর্ষের কোন নির্দিষ্ট সমাজ দেড়’শ কোটি মানুষ সৃষ্টি করেনি। কোন পন্হা এ মানুষগুলোর পক্ষে উপযোগী, কোন বিশ্বাস, কোন আচার, এদের সকলকে খাদ্য দেবে, শক্তি দেবে, তা বেধে দেবার ভার কোন দল জোর করে নিতে চায় কোন বলে। তা আবার নূপুর শর্মা’কে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে!